৫০ বছর ধরে দুর্ঘটনায় মৃত মোটরবাইক চালকদের হেলমেট সংগ্রহ!
৫০ বছর ধরে দুর্ঘটনায় মৃত মোটরবাইক চালকদের হেলমেট সংগ্রহ!
Copy By Jamunatv আন্তর্জাতিক |ফুল নয়, ফল নয়, হেলমেটের ‘বাগান’ করাই তার শখ। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর এটাই করে চলেছেন। তিনি থাইল্যান্ডের সোম্পং চানরাকসা (৬০)। দুর্ঘটনায় মৃত মোটরবাইক চালকদের হেলমেট সংগ্রহ করাকেই শখ হিসেবে নিয়েছেন তিনি। তার ‘বাগানে’ রয়েছে বিভিন্ন রঙের ও ঢঙের ৭০০টি হেলমেটের সংগ্রহ। একটাই উদ্দেশ্য, সড়ক দুর্ঘটনার ব্যাপারে সতর্কতা ও নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
থাইল্যান্ডের রোডগুলো বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক। সড়ক দুর্ঘটনা এখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রতি বছর এভাবে ২০ হাজার মানুষ নিহত হন। এর এক-তৃতীয়াংশই মোটরবাইক বা থ্রি-হুইলার চালক। সড়ক দুর্ঘটনা নিশ্চিতভাবেই অত্যন্ত বেদনার। বিষয়টি গভীরভাবে ব্যথিত করে থাই নাগরিক সোম্পং চানরাকসাকে। দুর্ঘটনা রোধে একটু ভিন্নভাবে কাজ শুরু করলেন তিনি। যেখানেই সড়ক দুর্ঘটনা সেখানেই ছুটে যান। সংগ্রহ করেন চালকের হেলমেট। এভাবে প্রায় ৫০ বছর ধরে সংগৃহীত সেই হেলমেট দিয়েই একটি ‘বাগান’ গড়ে তুলেছেন তিনি। তার বাগানে প্রবেশপথেই একটা মোটরবাইক চোখে পড়ে। সামনে বসা বড় একজন, পেছনে তাকে আকড়ে ধরে রয়েছে ছোট একটা বাচ্চা। মুহূর্তেই বুঝতে পারবেন এ দু’জন আসলে ম্যানিকুইন। মানবের আদলে গড়া এই দুই পুতুল এমনভাবে সাজানো হয়েছে একদম সত্যি মনে হবে। এই বাইকের পেছনেই আরও অনেক হেলমেট। খুঁটি পুঁতে পুঁতে তার ওপর সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এগুলোই যেন তার বাগানের ফুল। বাগানটির সঙ্গে বহু হতভাগা মানুষের স্মৃতিবিজড়িত। হেলমেটগুলো যারা ব্যবহার করতেন তাদের গল্পগুলোই যেন শোনায় এই বাগান।
সম্প্রতি স্কাই নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে নিজের এই ‘বাগান’ সম্পর্কে সোম্পং বলেন, ‘এটা আমি বানিয়েছি, মানুষকে একটা বার্তা দেয়ার জন্য যে, তারা যেন বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে নিরাপত্তার জন্যে হেলমেট পরে নিতে ভুলে না যান। অনেক সময়ই তারা হেলমেটটা পাশে বা সামনে রাখেন। ভাবেন, এটা পরলে তাদের ভালো দেখায় না। কিন্তু এই হেলমেটগুলো দিয়ে আমি মানুষকে বাইক নিয়ে বের হওয়ার আগে হেলমেট পরে নেয়ার কথা মনে করিয়ে দিতে চাই।’
দুটো পুরনো হেলমেট হাত তুলে নিয়ে সোম্পং বলেন, ‘এ দুটোর বয়স যুগ পেরিয়েছে। বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল বাইকের। আরোহী ঘটনাস্থলেই মারা যান। সেদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। কাজে যাওয়ার আগে খাওয়ার কাজটা সেরে নিচ্ছিলাম। বাইরে থেকে বিকট আওয়াজ শুনলাম। বেরিয়ে দেখি দু’জনের লাশ পড়ে আছে। চালকের হেলমেটটি পড়ে ছিল। ওটা কেউ নেয়নি। পরে আমি নিয়ে আসি।’
Comments